পাকুটিয়া পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের ইতিকথা
'পাকুটিয়া গণ উচ্চ বিদ্যালয়' কে কেন্দ্র করে যেমন আজকের পাকুটিয়া পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ- এ রূপান্তর-তদ্রুপ Pakutia M.E. School -কে কেন্দ্র করে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দ সনে স্থাপিত হয়েছিল পাকুটিয়া গণ উচ্চ বিদ্যালয়।
Pakutia M.E. School স্থাপিত হয় ১৯১৫ সনের ২রা জানুয়ারি এবং উক্ত জানুয়ারি মাস থেকেই এর পাঠদান কার্যক্রম। প্রাথমিক ও Pakutia M.E. School এর ভূমি ও অবকাঠামোগত সকল ব্যয়ভার বহন করেছিলেন কালীনাথ ঘোষ মহোদয়। পরবর্তীকালে তার তিন পুত্র যথাক্রমে দূর্গানাথ ঘোষ, হৃদয়নাথ ঘোষ ও কেদারনাথ ঘোষ ভ্রাতাত্রয় তাদের পিতার নামানুসারে অত্র এলাকার দরিদ্র জনসাধারনের কল্যানার্থে ও মহৎ উদ্দেশ্যে ১৯৩৮ সালে স্থাপন করেন 'কালীনাথ ডিসপেনসারী', যা অবকাঠামোগত ও নামকরণে রূপান্তরিত হয়ে আজকের 'পাকুটিয়া উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র'। এই চিকিৎসালয় অর্থাৎ তৎকালীন "কালীনাথ ডিসপেনসারি" বিল্ডিং এবং ডাক্তার ও হেলথ এ্যাসিস্ট্যান্ট এর আলাদা বসবাসের উপযোগী পাশাপাশি দু'টি বাসা নির্মাণের সকল ব্যয়ভার বহন করে ভূমি দান করে গিয়েছেন ঘোষ ভ্রাতাগণ।
Pakutia M.E. School এর প্রধান শিক্ষক আহাম্মদ সরকার সাহেবের অবসরের পর প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব গ্রহন করেন রামজীবনপুর নিবাসী পূর্ণ চন্দ্র আদিত্য মহোদয়। তিনি পশ্চিম বঙ্গে চলে যাবার পর গোপালপুর থানাধীন ডুবাইল নিবাসী দ্বিগেন্দ্র নাথ ঘটক বিদ্যালয় পরিচালনা করেন। ঐ সময় "কালীনাথ ডিসপেনসারি"র (বর্তমান পাকুটিয়া উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র) প্রধান চিকিৎসক ছিলেন অখিল চন্দ্র দত্ত L.M.F উল্লেখ্য ডাঃ অখিল চন্দ্র দত্তের সাথে আন্তরিকতা গড়ে উঠে প্রয়াত মোঃ আব্দুল করিম তালুকদার, মোঃ ছামান আলী দেওয়ান, মোঃ রোস্তম আলী খান, মোঃ আব্দুর রহমান সরকার এবং বাবু হৃদয় নাথ ঘোষ মহোদয়ের। অত্র এলাকার এসব নেতৃবর্গের প্রধান মিলন কন্দ্রেই ছিল তৎকালীন এই চিকিৎসালয়টি। আর এই স্থান থেকেই ঐসব নেতৃবর্গের দ্বারা আলোচনার সূত্রপাত ঘটে Pakutia M.E. School কে প্রথমে নিম্ন মাধ্যমিক ও পরে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পরিণত করার।
উপরোল্লেখিত নেতৃবর্গের কঠোর শ্রম, চিন্তা শক্তি ও ত্যাগের বিনিময়েই প্রতিষ্ঠা হয়েছিল এই বিদ্যালয়টি। আর দ্বিতীয় পর্যায়ে যারা সাংগঠনিক সাহায্যের হাত বাড়িয়েছিলেন, তারা হলেন বাবু পূর্ণ চন্দ্র রায় (রামজীবনপুর), হাজী তসির উদ্দিন সরকার (আইনপুর), মোঃ রজব আলী সরকার (ঝুনকাইল), মোঃ তোমেজ উদ্দিন মোগল (পূর্ব পাকুটিয়া) বাবু মহীম চন্দ্র দাস (ঝুনকাইল)।
প্রারম্ভিক মুহূর্তে ৩ জন শিক্ষক ও ৮০ জন ছাত্র নিয়ে যাত্রা শুরু করে এই প্রতিষ্ঠানটি। ঐ সময় 'কালীনাথ ডিসপেনসারী'র উত্তর পশ্চিম কোনের একটি কক্ষকে বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষ হিসেবে ব্যবহার করেই উচ্চ বিদ্যালয়ের কাার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। তাই একদিকে উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন ত্যাগী কর্মীদের যেমন ছিল এটি মিলন ও চিন্তার কেন্দ্রবিন্দু অপরদিকে আপদকালীন সময়ে অফিস কক্ষ ব্যবহারের সুযোগপ্রাপ্তি সবকিছু মিলিয়েই এ চিকিৎসালয়টি 'পাকুটিয়া পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজে'র ইতিহাসে মাতৃত্বের স্থান লাভ করে আছে।
বিদ্যালয়টি ১৯৫৩ সনের ১লা জানুয়ারী স্বীকৃতি লাভ করে এবং এই স্বীকৃতির জন্য সেদিন সচেষ্ট ভূমিকা পালন করেছিলেন অত্র এলাকার তৎকালীন উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তিত্ব মোঃ খোরশেদ আলী দেওয়ান সাহেব। ১৯৫৬ সনে বিদ্যালয়ে স্কাউট ট্রুপ প্রবর্তিত হয় এবং স্কাউট শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন বাবু গোপাল চন্দ্র ভদ্র মহোদয়।
১৯৬২ সনের ৭ই সেপ্টেম্বর প্রধান শিক্ষক শাহ্ এ.এম. বকতিয়ার বি.এ, বি.টি সাহেব বিদায় গ্রহণের পর ৮ই সেপ্টেম্বর'১৯৬২ ইং তারিখে মৌঃ মোঃ আজমত আলী এম.এ, বি.টি সাহেব প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন এবং তার আমলেই বিদ্যালয়টি অগ্রগতির পথে পা বাড়ায়। ছাত্র ছাত্রীদের প্রতিভা ও মেধা বিকাশের উপায় সমূহে এবং বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে তিনি আত্ম নিয়োগ করেন। তন্মধ্যে স্কুল মসজিদ স্থাপন, ছাত্র হোস্টেল প্রতিষ্ঠা, প্রধান শিক্ষকের বাসা নির্মাণ, মাসিক দেওয়াল পত্রিকা ও বার্ষিকী প্রকাশনা, সাপ্তাহিক বিতর্ক প্রতিযোগিতা, ছাত্র সপ্তাহ প্রতিপালন, Old Student gathering, House system ও কৃষি শিক্ষা প্রবর্তন অন্যতম। তৎকালীন ইউনিয়ন কৃষিকর্মী মোঃ আব্দুল মজিদ সাহেবকে খন্ডকালীন কৃষি শিক্ষক নিযুক্ত করেন। উল্লেখ্য তার বিদ্যালয় পরিচালনাকালীন সময়েই একটি টিনশেড ছাত্রাবাস এর জন্য নগদ অর্থ ও একটি দেয়াল ঘড়ি দান করেছিলেন সৎঙ্গের প্রয়াত সম্পাদক রাস বিহারী আদিত্য মহোদয়। যা স্কুল কমিটির পক্ষ থেকে গ্রহন করেছিলেন মোঃ আব্দুল করিম তালুকদার, মোঃ আব্দুর রহমান সরকার ও শ্রী গোপাল চন্দ্র ভদ্র মহোদয়। প্রায় ৫ বছর ৩মাস কাল বিদ্যালয় পরিচালনার পর ১৯৬৭ সনের ৩১ ডিসেম্বর তিনি বিদায় গ্রহন করেন।